১০ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে বলে সরকারি দাবি থাকলেও পাওয়ার সেলের এক নথিতে দেখা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে মাত্র ৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ১ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এর মধ্যে ২৩০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ এবং ১ হাজার ৮০ দশমিক ৩৬ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ।
ইউএনবির হাতে আসা পাওয়ার সেলের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মোট ৩ হাজার ৯৬৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট প্রকল্প বাস্তবায়নের নানা স্তরে রয়েছে। এর মধ্যে ৯৪৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট প্রকল্প নির্মাণাধীন, ৬০৯ মেগাওয়াট লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বা নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) পেয়েছে, ২২৮ মেগাওয়াটের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন এবং ২ হাজার ১৮৩ মেগাওয়াট পরিকল্পনা গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল, ১ জুন থেকে কার্যকর
গত বছর এক আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, ১০ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
‘এনসিউরিং অ্যাক্সেস টু অ্যাফর্ডেবল, রিলায়েবল অ্যান্ড মর্ডার্ন এনার্জি সার্ভিসেস টুয়ার্ডস আ রিসাইলেন্ট সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন জোরদারের লক্ষ্যে সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা, সোলার ইরিগেশন রোডম্যাপ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির মতো উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন নসরুল হামিদ।
তবে পাওয়ার সেলের নথিপত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। বর্তমানে মাত্র ১৫টি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণাধীন। এর মধ্যে চারটি সরকারি খাতে (১৫৩ মেগাওয়াট) এবং ১১টি বেসরকারি খাতে (৪০৮ মেগাওয়াট)।
সরকারি খাতের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- সিরাজগঞ্জ ২ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র
- বরিশাল ১ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ
- সোনাগাজী ৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ
- মাদারগঞ্জ জামালপুর ১০০ মেগাওয়াট সোলার পার্ক
আরও পড়ুন: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা
বেসরকারি খাতের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- কক্সবাজার ৬০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ (ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জি বিডি)
- পাটগ্রাম লালমনিরহাট ৫ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ (পিভি পাওয়ার পাটগ্রাম)
- সিলেট ৫ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ (ইকি সুজি ও সান সোলা পাওয়ার)
- সুনামগঞ্জ ৩২ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ (হাওর বাংলা, কোরিয়া গ্রিন এনার্জি)
- তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় ৩০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ (করতোয়া সোলার)
- বেড়া ৩.৭৭ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ (সৌদি এগ্রো সোলার)
- পাবনা ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ (ডায়নামিক সান এনার্জি)
- সিরাজগঞ্জ ৬৮ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ (বিসিআরইসিএল)
- মোংলা, বাগেরহাট ৫৫ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ (মোংলা গ্রিন পাওয়ার)
- নারায়ণগঞ্জ ৬ মেগাওয়াট বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ (ইউডি গ্রিন এনার্জি)
- উত্তর ঢাকা ৪২.৫০ মেগাওয়াট বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ (ডব্লিউটিই পাওয়ার প্ল্যান্ট নর্থ ঢাকা প্রাইভেট লিমিটেড)
পাওয়ার সেলের এক কর্মকর্তা জানান, এসব প্রকল্পের বাইরে ৬০৯ মেগাওয়াটের মোট ১৩টি প্রকল্পের জন্য এলওআই ও এনওএ ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি প্রকল্পের (২২৮ মেগাওয়াট) দরপত্র প্রক্রিয়াধীন এবং ২৫টি প্রকল্প (২১৯৩ মেগাওয়াট) পরিকল্পনা গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ, বিশেষ করে সৌর ও জলবিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন পাওয়ার সেলের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
গত মার্চে নসরুল হামিদ বলেছিলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশের।
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল জরুরি: বক্তারা